হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল ক্বদর সমাগত - ARNews71.blogspot.com

https://arnews71.blogspot.com/

Monday, June 11, 2018

হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল ক্বদর সমাগত

লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদরের রাত্রি হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত। ইসলামে রাত্রির গুরুত্ব তাৎপর্য অপরিসীম। পবিত্র কুরআনুল কারীমে রাতের গুরুত্ব শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ পাক একটি ছোট্ট সূরা নাযিল করেছেন। লাইলাতুল ক্বদর রমজান মাসে হওয়ায় পুরো মাসের মর্তাবাও অনেকখানি বেড়ে গেছে। 
সুরাতুল ক্বদরে আল্লাহ ছুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করেন, “ . আমি একে (আল কুরআনকে) নাযিল করেছি লাইলাতুল ক্বদরে। . হে নবী, আপনি কি লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন? . লাইলাতুল ক্বদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত। . এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রূহ (জিব্রাইল আমীন) অবতীর্ণ হন তাঁর পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। . রাতের প্রত্যেকটি বিষয়ে রয়েছে শান্তি ; ভোরের উদয় পর্যন্ত রজনী বিদ্যমান থাকে।
সুরাটি নাযিলের একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। একদা হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের কাছে বনী ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন, তিনি এক হাজার মাস পর্যন্ত আল্লাহর পথে জিহাদে মশগুল থাকে। কখনো অলসতা পোষণ করেননি। মুসলমানগণ কথা শুনে বিষ্মিত হলে সুরা ক্বদর নাযিল হয়। অন্য একটি বর্ণনা মতে, বনী ইসরাইলের চারজন ইবাদতগুজার ব্যক্তি প্রত্যেকে ৮০ বছর ধরে সর্বক্ষণ আল্লাহ পাকের ধ্যানে কাটান। কথা শুনে সাহাবায়ে ক্বেরাম বিষ্ময় হতাশা ব্যক্ত করেন। কারণ তারা সে জামানার ইবাদতকারী লোকদের মত দীর্ঘ হায়াত লাভ করেন না। তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন নাযিলের রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ঘোষণা দিয়ে আলোচ্য সুরাটি নাযিল করেন। লাইলাতুল ক্বদর তথা ভাগ্য রজনীর শব্দগত তাৎপর্য নিয়ে দুটি মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এখানে ক্বদর অর্থ তাকদীর এবং আদেশ আর কেউ বলেছেন, ক্বদর মানে মহাত্ম সম্মান। দুটি অর্থই বিশ্লেষণ করে বলা যেতে পারে যে, যে ব্যক্তি ইতিপূর্বে ইবাদত বন্দেগী করে ক্বদর বা সম্মানের অধিকারী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে সে ব্যক্তি রাতে তাওবাইস্তিগফারঅনুশোচনা এবং ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক ইবাদত করলে ক্বদর বা সম্মানের অধিকারী হতে পারবে। ক্বদর শব্দের অর্থ তাকদীর বা আদেশ হয়ে থাকে। তা এজন্য যে, রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপক প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। এতে বান্দার রিয্ক,বয়স,জন্মমৃত্যুবৃষ্টি সবই লিখে দেয়া হয়। প্রধান প্রধান ফিরিশতাগণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বদর পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতেই এসে থাকে। হাদীস শরীফে রাতটি ঠিক কখন তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এরও একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে। তা হচ্ছে, উম্মতে মুহাম্মদী যেন বরকতময় রমজানের দশ দিনই লাইলাতুল ক্বদর খুঁজতে গিয়ে অত্যধিক ইবাদতে মশগুল থেকে কামিয়াবী হাছিল করতে পারে। বুখারী শরীফে হযরত আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমাইয়েছেন, “ পবিত্র রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রে তোমরা লাইলাতুল ক্বদরের তালাশ করবে।
অনুরূপভাবে মুসলিম শরীফে রেওয়ায়েত হয়েছে,“হযরত আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকের ইবাদতে যত অধিক পরিশ্রম করতেন তত পরিশ্রম আর কখনো করতেন না। বর্ণনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, নবীজী রমজানের শেষ দশকে নিজে অত্যধিক পরিশ্রম করে লাইলাতুল ক্বদর সন্ধানের মাধ্যমে তার উম্মতের জন্য অনুপম শিক্ষা রেখে যান। হযরত আবু বকর রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,“ আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যেরমজানের শেষের ,,, অথবা শেষ রাত্রি বাকি থাকতে তোমরা লাইলাতুল ক্বদর সন্ধান কর। ”- তিরমিজী শরীফ। হযরত উবাদা বিন সামিত রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে লাইলাতুল ক্বদরের খবর দেয়ার জন্য বের হলেন এমন সময় দুইজন মুসলমান কলহ আরম্ভ করল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল ক্বদরের খবর দেয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক কলহে লিপ্ত হল, ফলে আমিও ভুলে গেলাম। সম্ভবত: এটা আমাদের জন্য মঙ্গল হয়েছে। সুতরাং তোমরা ২৯,২৭ ২৫ রাত্রিতে লাইলাতুল ক্বদর সন্ধান করবে।”- (ছহীহ আল বুখারী) ছহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ণনায় ২৭ রমজানের রাতের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাই যুগ যুগ ধরে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে রমজানের রাতই পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। অবশ্য রাত রমজান মাসের মধ্যে আবর্তিত হয়ে থাকে। যাই হোক, ফয়জবরকত হাছিলের জন্য আমাদেরকে রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়তে হবে। মাগফিরাত নাজাত লাভে ব্রতী হতে হবে। অত্যধিক পরিশ্রম করে সৌভাগ্যবানদের মাঝে অন্তর্ভূক্ত হতে হবে। আয় আল্লাহ ! তুমি আমাদেরকে অন্ততপক্ষে জীবনে একবার হলেও লাইলাতুল ক্বদর বখশিশ করুন। আমীন

No comments:

Post a Comment